ফজরের সুন্নাত হলো দীনের প্রথম সুন্নাতে রাতেবা (মুয়াক্কাদা)। এখানে কয়েকটি সুন্নাত আমল রয়েছে। তবে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে ‘সুনানে রাওয়াতেব’ নিয়ে কিছু আলোচনা করা দরকার। এক কথায় সুন্নাতে রাতেবা হলো: ফরজ নামাজের পরে সবসময় পড়তে হয় এমন সুন্নাত। আর সেটা হলো বারো রাকাআত।
উম্মে হাবীবা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে বারো রাকাআত নামাজ পড়বে, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মিত হবে। (মুসলিম ৭২৮), তিরমিযীতে আরও একটু বিস্তারিত রয়েছে: যোহরের আগে চার রাকাআত। যোহরের পরে দুই রাকাআত। মাগরিবের আগে দুই রাকাআত। ইশার পরে দুই রাকাআত এবং ফজরের আগে দুই রাকাআত। ( তিরমিযী- ৪১৫। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতে রাতেবা হলো ফজরের সুন্নাত। দলীল হলো: ক. আয়েশা রা. এর হাদীস। তিনি বলেন, ‘নফল নামাজের ভেতর থেকে ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত অপেক্ষা অধিক যত্নের আর কিছু তাঁর কাছে ছিল না’। (বুখারী ১১৯৬, মুসলিম ৭২৪) |
ফজরের সুন্নাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ
এক. ঘরে ও সফরে উভয় অবস্থায় এই সুন্নাত পড়ার সমান গুরুত্ব রয়েছে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে এ ব্যাপারে হাদীস রয়েছে। এর বিপরীতে অন্যান্য নামাজের সুন্নাতগুলো সফরের সময় ছেড়ে দেয়াই সুন্নাত। যেমন যোহর, মাগরিব ও ইশার সুন্নাত।
ফজরের সুন্নাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ
দুই. এই সুন্নাত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা কিছু রয়েছে সবচেয়ে উত্তম- যেমনটা পূর্বে বলা হয়েছে।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাআত নামাজ দুনিয়া ও দুনিয়ার ভেতরে যা কিছু রয়েছে সবকিছুর চেয়ে উত্তম’। (মুসলিম ৭২৫)
ফজরের সুন্নাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ
তিন. এই দুই রাকাআত সুন্নাত সংক্ষিপ্তাকারে আদায় করা সুন্নাত।
দলীল: আয়েশা রা. এর হাদীস। তিনি বলতেন, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) এত হালকা করে পড়তেন যে আমি (মনে মনে) বলতাম, তিনি কি তাতে সূরা ফাতেহা পড়েছেন নাকি পড়েননি?’ (বুখারী ১১৭১, মুসলিম ৭২৪)
তবে শর্ত হলো, হালকা করতে গিয়ে যেন ওয়াজিব ছুটে না যায়। কিংবা মুরগীর মতো ঠোকর দিয়ে নামাজ না পড়তে হয়। তাতে সুন্নাত ধরতে গিয়ে নিষিদ্ধ কাজ করা হবে।
ফজরের সুন্নাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ
চার. ফজরের সুন্নাত নামাজের প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতেহার পরে সূরা কাফিরূন আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া সুন্নাত। মুসলিম শরীফে আবু হুরাইরা রা. এর হাদীস এটার দলীল। অথবা চাইলে প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতেহার পরে সূরা বাক্কারার নিম্নোক্ত আয়াত পড়তে পারে: قُولُواْ آمَنَّا بِاللّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالأسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ [বাক্বারা: ১৩৬] |
আর দ্বিতীয় রাকাআতে আলে ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াত পড়বে: قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْاْ إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئاً وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَاباً مِّن دُونِ اللّهِ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُولُواْ اشْهَدُواْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ [আলে ইমরান: ৫২]। দলীল মুসলিম শরীফে ইবনে আব্বাসের হাদীস। যেহেতু একাধিক সূরা পড়ার কথা রয়েছে। সুতরাং কখনও এটা পড়বে, কখনও অন্যটা পড়বে।