দলীল: আবু হুরাইরা রা. এর হাদীস। তিনি বলেন, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যদি তারা আগে আগে মসজিদে যাওয়ার ফজীলত জানতো, তবে প্রতিযোগিতা শুরু করতো’। (বুখারী ৬১৫, মুসলিম ৪৩৭)
Simple Audio Player
পবিত্র অবস্থায় থেকে বের হওয়া। এতে প্রতি কদমে সওয়াব হয়।
দলীল আবু হুরাইরা রা. এর হাদীস। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘বাড়িতে কিংবা বাজারে একাকী নামাজের চেয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় বিশের অধিক গুণ শ্রেষ্ঠ। কেননা এক ব্যক্তি যখন কেবল নামাজের উদ্দেশ্যেই সুন্দরভাবে অজু করে মসজিদের পানে ঘর থেকে বের হয়, তখন তার প্রত্যেকটি কদমে একটি করে মর্যাদা বুলন্দ করে হয় এবং একটি করে গোনাহ ক্ষমা করা হয়। অতঃপর যখন মসজিদে থাকে, নামাজের জন্যই থাকে। তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়ার পরে সেই জায়গাতেই বসে থাকে, তবে যতক্ষণ সেখানে বসে থাকে ফিরিশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে। বলতে থাকে, ‘হে আল্লাহ আপনি তাকে রহম করুন। তাকে ক্ষমা করে দিন। তার তাওবা কবুল করুন। বান্দা কাউকে কষ্ট দেয়া কিংবা অজু ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফিরিশতারা এভাবে দুআ করতে থাকে’। (মুসলিম ৬৪৯)
Simple Audio Player
ধীরে-সুস্থে ও শান্তভাবে মসজিদের দিকে যাওয়া
দলীল আবু হুরাইরা রা. এর হাদীস। তিনি বলেন, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ইকামত শুনলে তোমরা মসজিদের দিকে যাবে। ‘সাকীনা’ ও ‘ওকার’ এর সঙ্গে যাবে। তাড়াহুড়ো করবে না। (ইমামের সঙ্গে) যতটুকু পাবে ততটুকু পড়বে। আর যেটুকু ছুটে যাবে সেটা পূর্ণ করবে। (বুখারী ৬৩৬, মুসলিম ৬০২)
ইমাম নববী র. বলেছেন, (হাদীসে ব্যবহৃত) ‘সাকীনা’র সম্পৃক্ততা হচ্ছে চলাফেরার সঙ্গে। অর্থ হচ্ছে ধীরে চলা। অনর্থক কাজ থেকে বেঁচে থাকা। আর ‘ওকার’ এর সম্পৃক্ততা হচ্ছে অবস্থার সঙ্গে। অর্থ হচ্ছে চোখ অবনমিত রাখা। আওয়াজ অনুচ্চ রাখা এবং এদিক সেদিক না তাকানো’। নববী র. কৃত শরহে মুসলিম হাদীস নং ৬০২, ‘ধীরে-সুস্থে মসজিদে আসা মুস্তাহাব এবং দৌড়ে আসা নিষেধ অধ্যায়’।
Simple Audio Player
মসজিদে ঢোকার সময় ডান পা আগে দেয়া এবং বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে বের হওয়া।
দলীল: আনাস রা. এর হাদীস। তিনি বলেন, ‘মসজিদে ঢোকার সময় প্রথমে ডান পা দেয়া আর বের হওয়ার সময় প্রথমে বাম পা দেয়া সুন্নাত’। (হাকিম ১/৩৩৮; মুসলিমের শর্তে এটাকে সহীহ বলেছেন)
Simple Audio Player
মসজিদে ঢোকা ও বের হওয়ার সময় হাদীসে বর্ণিত দুআ পড়া।
দলীল: আবু হুমাইদ অথবা আবু উসাইদ রা. এর হাদীস। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন যেন বলে ‘আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক’। আর যখন বের হয়, তখন যেন বলে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাযলিক’। (মুসলিম ৭১৩)
Simple Audio Player
দুই রাকাআত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ নামাজ পড়া
আগে আগে মসজিদে এলে বসার আগে দুই রাকাআত নামাজ পড়া সুন্নাত। এটাকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ বলা হয়। দলীল আবু কাতাদা রা. এর হাদীস। তিনি বলেন, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, তখন দুই রাকাআত নামাজ পড়া ব্যতীত যেন না বসে’। (বুখারী ১১৬৩, মুসলিম ৭১৪)
যেসব ফরজ নামাজের আগে সুন্নাত রয়েছে, সেসব নামাজের সুন্নাত আদায় করলেই তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় হয়ে যাবে। উদাহরণত ফজর কিংবা যোহরের সুন্নাত। যদি চাশতের সময় মসজিদে প্রবেশ করে তখন চাশতের নামাজ। অথবা মসজিদে যদি বিতরের নামাজ আদায় করে অথবা কোনো ফরজ আদায় করে সেটাও তাহিয়্যাতুল মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে। কেননা তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজের উদ্দেশ্য হলো বসার আগে নামাজ পড়া। এভাবেই নামাজের দ্বারা মসজিদ আবাদ করা হবে। ফলে নামাজ ছাড়া সেখানে কেউ যাবে না।
Simple Audio Player
পুরুষের প্রথম কাতারে থাকার চেষ্টা করা। তাদের জন্য প্রথম কাতার উত্তম। আর নারীদের জন্য শেষের কাতার উত্তম।
দলীল: আবু হুরাইরা রা. এর হাদীস। নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘পুরুষের জন্য সর্বোত্তম কাতার হলো সামনের কাতার। আর সর্বনিম্ন কাতার হলো পেছনের কাতার। অপরদিকে নারীদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হলো পেছনের কাতার। আর সর্বনিম্ন কাতার হলো সামনের কাতার’। (মুসলিম: ৪৪০) সর্বোত্তম কাতার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শ্রেষ্ঠত্ব ও সওয়াবের দিক থেকে উত্তম আর সর্বনিম্ন কাতার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শ্রেষ্ঠত্ব ও সওয়াবের দিক থেকে সবচেয়ে কম।
উপর্যুক্ত হাদীস থেকে আরও একটি মাসআলা জানা গেলো। সেটা হচ্ছে যখন নারী-পুরুষ একই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে এবং তাদের মাঝে দেয়াল কিংবা অন্য কোনো আড়াল না থাকে। তখন নারীদের জন্য সবচেয়ে উত্তম কাতার হলো পেছনের কাতার। কেননা এটা পুরুষের দৃষ্টি থেকে তাদের সুরক্ষার সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। তবে যদি উভয়ের মাঝে দেয়াল বা এজাতীয় কিছু থাকে; উদাহরণত বর্তমান সময়ের মসজিদগুলোতে যেমন রয়েছে, সেক্ষেত্রে নারীদেরও সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে সামনের কাতার। কারণ এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞার ‘ইল্লত’ বা কারণ বিদ্যমান নেই। আর ফিক্বহী কায়েদা হচ্ছে, ‘ইল্লাত’ তথা কারণ বিদ্যমান থাকা না থাকার সঙ্গে হুকুমও সম্পৃক্ত। সুতরাং একদিকে কারণ বিদ্যমান নেই। অপরদিকে সাধারণভাবেই নামাজের শ্রেষ্ঠ কাতার বলা হয়েছে সামনের কাতারকে। এর অসংখ্য দলীল রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করছি:
আবু হুরাইরা রা. এর হাদীস। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যদি মানুষেরা জানতো আযান দেয়া ও প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ভেতরে কতটা ফজীলত রয়েছে, তাহলে প্রয়োজনে তারা এর জন্য লটারির ব্যবস্থা করতো। যদি তারা জানতো আগে আগে মসজিদে যাওয়ার ভেতরে কতটা ফজীলত রয়েছে, তবে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করতো। যদি তারা জানতো ইশা ও ফজরের নামাজে কী রয়েছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে এসে নামাজ পড়তো’। (বুখারী ৬১৫, মুসলিম ৪৩৭)
Simple Audio Player
মুক্তাদীর জন্য ইমামের কাছাকাছি দাঁড়ানো সুন্নাত।
যেমনটি আমরা পেছনে বলেছি, মুক্তাদীর জন্য সর্বোত্তম হলো সামনের কাতার। পাশাপাশি যথাসাধ্য ইমামের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করবে। কেননা সামনের কাতার হওয়ার পাশাপাশি ইমামের ডানে ও বামে যত কাছে থাকবে ততোই উত্তম।
দলীল:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. এর হাদীস। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের ভেতর থেকে আমার আশপাশে যেন জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান লোক থাকে’। (আবু দাঊদ ৬৭৪, তিরমিযী ২২৮)। এ হাদীস দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, যে কেনো দিক থেকেই হোক, ইমামের কাছাকাছি থাকা উচিত।