অজুর শুরুতে কিংবা কুলি করার আগে মিসওয়াক করতে হবে। এটা হলো মিসওয়াক করার দ্বিতীয় জায়গা। আগে আমরা আরেক জায়গায় মিসওয়াকের কথা উল্লেখ করেছি। সুতরাং অজুর আগে মিসওয়াক করা সুন্নাত। আবু হুরাইরা রা. এর হাদীস এর দলীল। প্রিয় নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে প্রত্যেকবার অজু করার সময় মিসওয়াকের নির্দেশ দিতাম। (আহমদ: ৯৯২৮, ইবনে খুযাইমা: ১/৭৩/১৪০, হাকেম ১/২৪৫, বুখারী (হাদীসে মুআল্লাক), রোজাদারের জন্য শুকনো ও ভেজা মিসওয়াক অধ্যায়।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. এর হাদীসও এক্ষেত্রে দলীল। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁর জন্য মিসওয়াক ও অজুর পানি প্রস্তুত করে দিতাম। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী রাতে তাকে জাগ্রত করতেন। তিনি উঠে মিসওয়াক করতেন। এরপর অজু করে নামাজ পড়তেন..’। (মুসলিম ৭৫৬)
দলীল: নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অজুর রূপরেখা বর্ণনা সংক্রান্ত উসমান রা. এর হাদীস। তাতে এসেছে, ‘তিনি (উসমান) অজুর পানি চাইলেন। অতঃপর অজু শুরু করলেন এবং উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধুইলেন’..’। অতঃপর বললেন, ‘নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি এভাবে অজু করতে দেখেছি’। (বুখারী ১৬৪, মুসলিম ২২৬)
দলীল: লাকীত ইবনে সাবরা রা. এর হাদীস। নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেন, ‘পূর্ণাঙ্গভাবে অজু করবে। আঙুল খেলাল করবে। রোজাদার না হলে ভালো করে নাকে পানি দিয়ে পরিস্কার করবে’। (আহমদ ১৭৮৪৬, আবু দাঊদ ১৪২)। ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, ‘হাদীসটি বিশুদ্ধ’ (আল-ইসাবা ৯/১৫)। ‘পূর্ণাঙ্গভাবে অজু করবে’ বক্তব্যটির মাঝে ভালোভাবে কুলি করার প্রমাণ রয়েছে ।
দলীল: নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অজুর বর্ণনা প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ রা. এর হাদীস। তিনি বলেন: ‘... তিনি (পাত্রে) হাত প্রবেশ করিয়ে এক আঁজলা পানি নিলেন এবং সেটা দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তিনবার এমন করলেন’...। (বুখারী ১৯২, মুসলিম ২৩৫)
প্রথমে মাথার অগ্রভাগে উভয় হাত রাখবে। সেগুলো টেনে পেছনে নিয়ে যাবে। এরপর আবার পেছন দিক থেকে টেনে সামনে নিয়ে আসবে। নারীরাও এভাবে মাথা মাসাহ করবে। তবে তাদের ঘাড়ের নিচের ঝুলন্ত চুল মাসাহ করতে হবে না।
দলীল:
নবীজীর অজুর বর্ণনা প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ রা. এর হাদীস। তাতে এসেছে, ‘তিনি মাথার অগ্রভাগ থেকে মাসাহ শুরু করলেন এবং পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। এরপর যেখান থেকে মাসাহ শুরু করেছিলেন, হাতগুলোকে আবার সেখানে নিয়ে এলেন’। (বুখারী ১৮৫, মুসলিম ২৩৫)
প্রথমবার ধোয়া ওয়াজিব। দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার সুন্নাত। তিনবারের বেশি ধুইবে না।
দলীল:
বুখারী শরীফে বর্ণিত ইবনে আব্বাস রা. এর হাদীস: ‘নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অজু করলেন এবং একবার করে সকল অঙ্গ ধৌত করলেন’ (বুখারী ১৫৭)। অপরদিকে আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ থেকে বুখারীর হাদীস: ‘নবীজী সা. অজু করলেন এবং সকল অঙ্গ দুই বার করে ধৌত করলেন’ (বুখারী ১৫৮)। সর্বশেষ বুখারী ও মুসলিমে উসমান রা. এর হাদীস: ‘নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অজু করলেন এবং তিন বার কর ধৌত করলেন’। বর্ণনার এই ভিন্নতার কারণে আমলের ভেতরেও বৈচিত্র্য নিয়ে আসা উত্তম। সুতরাং কখনও একবার, কখনও দুই বার আবার কখনও তিনবার করে ধোয়া উচিত। আবার কখনও সংখ্যা ও অঙ্গের ভেতরেও ব্যতিক্রম করা উচিত। উদাহরণত মুখ একবার ধুয়ে হাত কিংবা পা দুইবার ধুইবে। যেমন বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দের অন্য একটি সূত্রের হাদীস এর প্রমাণ বহন করে (দেখুন যাদুল মাআদ ১/১৯২)। তবে সর্বশেষ কথা হলো, তিন বারের ওপরই আমল করা উচিত। এটাই প্রিয় নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত ও হিদায়াত।
أَشْهَدُ أَنَّ لاَ إِلهَ أَلاَّ اللّهُ , وَأَنَّ مُحمَّداً عَبْدُ اللّهِ وَرَسُولُهُ
উমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করার পরে এই দুআ পড়বে- আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুল্লাহি ওয়া রাসূলুহ’- তার জন্য জান্নাতের ৮ টি দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে। যেই দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে তাতে প্রবেশ করবে’। (মুসলিম ২৩৪)
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ, أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إلاَّ أَنْتَ, أَسْتَغْفِرُكَ وأَتُوبُ إلَيْكَ
অনুরূপভাবে আবু সাঈদ রা. থেকে ‘মারফূ’ সূত্রে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি অজু শেষ করবে এই দুআ পড়বে- সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আলহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা। আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা- এটা একটি কাগজে মুড়িয়ে আল্লাহ তাআলার তার ওপর সীল মেরে দিবেন। অতঃপর সেটা আরশের নিচে সুরক্ষিত করে রেখে দেয়া হবে। কিয়ামতের আগে সেটা খোলা হবে না’ । (নাসাঈ দিন ও রাতের আমল অধ্যায় পৃ. ১৪৭, হাকেম ১/৭৫২; ইবনে হাজার এটার সনদ সহীহ বলেছেন- দেখুন নাতায়িজুল আফকার ১/২৪৬। আরও বলেছেন, যদি মারফূ’ না হয়, তথাপি এটা মাওকূফ হাদীস। তাতে সমস্যা নেই। কেননা এটা মারফূ এর হুকুমে। কারণ এটা এমন একটা হাদীস যেখানে যুক্তি বা অনুমান খাটে না। সাহাবী অবশ্যই এটা নবীজী থেকে শুনে থাকবেন)