languageIcon
search
search
brightness_1 সর্বোত্তম যিকির হলো আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করা।

সর্বোত্তম যিকির হলো আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করা। কুরআনের তিলাওয়াত সালাফের রাতের ঘুমকে হারাম করে দিতো। তাদের চোখ থেকে অশ্রুনদী বইয়ে দিতো। (‘তারা রাতে কম ঘুমাতো। নিশীথের শেষ প্রহরে তারা ইস্তেগফার করতো’ (সূরা যারিয়াত: ১৮) সালাফে সালিহীন রাতের বেলা কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের সঙ্গে অন্যান্য যিকির করতেন। আল্লাহর যিকিরের সঙ্গে রাত কাটানোর ফজীলত বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আফসোস আজ আমরা এক্ষেত্রে অমার্জনীয় শিথীলতা দেখাচ্ছি। আল্লাহর গুটিকয়েক কিছু বান্দা বাদ দিয়ে অধিকাংশ মানুষই গাফেল। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

আতা বিন সায়েব থেকে হাম্মাদ বিন যায়দ বর্ণনা করেন, আবু আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা কুরআন এমন এক সম্প্রদায় থেকে গ্রহণ করেছি যারা আমাদেরকে বলেছেন, তারা কুরআনের দশটি আয়াত শেখার পরে সেটার ভেতরে যা কিছু আছে সবকিছু না জেনে সামনের দশটি আয়াত শিখতেন না। এভাবে কুরআন পড়া ও কুরআন অনুযায়ী আমল করা দু’টিই আমরা একসঙ্গে শিখেছি। আমাদের পরে এই কুরআন বহন করবে এমন এক সম্প্রদায়, যারা পানি গেলার মতো এই কুরআনকে গিলবে। অথচ কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না’। ( দেখুন- সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৪/২৬৯)

brightness_1 যিকির অন্তর জীবিত রাখে।

বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই হৃদয়ের কর্কশতা, দিলের রুক্ষতায় ভুগছি। মানুষের হৃদয়ে সেই প্রাণ নেই। আজ আত্মার সেই সজীবতা নেই। যিকিরই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে। আন্তরাত্মায় সজীবতা ফিরিয়ে আনতে। সহীহ বুখারীতে আবু মূসা রা. এর হাদীসে এসেছে তিনি বলেন, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করে আর যে যিকির করে না, তাদের উদাহরণ হচ্ছে জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো’। সহীহ মুসলিমে এসেছে, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ঘরে আল্লাহর যিকির করা হয় আর যে ঘরে করা হয় না, সেগুলোর উদাহরণ জীবিত ও মৃতের মতো’। (বুখারী ৬৪০৭, মুসলিম ৭৭৯)

 

brightness_1 আল্লাহ তাআলা কুরআনের একাধিক জায়গায় যিকিরের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

১. আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে বেশি বেশি যিকির করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর বেশি বেশি যিকির করো। সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করো’। (আল-আহযাব: ৪১-৪২)

২.  যেসব পুরুষ ও নারী যিকির করে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা, বিশাল পুরস্কার ও সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আর যেসব পুরুষ ও নারী আল্লাহর বেশি বেশি যিকির করে। আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও বিশাল পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন’। (আল-আহযাব: ৩৫)

৩.  আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। তারা যিকির করে ঠিকই, কিন্তু আয়াতে দেখুন তাদের যিকিরের পরিমাণ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়, আল্লাহও তাদের ধোঁকার বিনিময় দেন। আর যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন আলস্য ভরে মানুষকে দেখানোর জন্য দাঁড়ায়। আর তারা খুব কমই আল্লাহর যিকির করে’। (সূরা নিসা: ১৪২)

৪.  ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন যেন আল্লাহর যিকির থেকে আমাদের গাফেল না করে  এ ব্যাপারে আল্লাহ সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ! ধন-সম্পদ ও ছেলে-সন্ততি যেন  আল্লাহর যিকির থেকে তোমাদের গাফিল না করে। আর যারা এমন করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত’)। (সূরা মুনাফিকুন: ৯)

৫.  যিকিরের ফজীলতে আরও কিছু আয়াত ও হাদীস দেখুন: আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো’। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার ব্যাপারে বান্দার ধারণা অনুযায়ী কাজ করি। যখন সে আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সঙ্গে থাকি। যদি আমাকে মনে মনে স্মরণ করে, আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি, যদি সে আমাদের ভরা মজলিসে স্মরণ করে, আমিও তাকে তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মজলিসে স্মরণ করি’। (বুখারী ৭৪০৫, মুসলিম ২৬৭৫; আবু হুরাইরা রা. এর হাদীসের অংশবিশেষ)

 

brightness_1 রাসূলের সুন্নাহতে যিকিরের অসংখ্য পদ্ধতি এসেছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে: (১)

لاَ إِلهَ إِلاَّ اللّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

১. আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর- এই দুআটি যে ব্যক্তি প্রত্যেকদিন একশত বার পাঠ করবে, তার দশটি দাস মুক্ত করার সওয়াব হবে। তার জন্য একশ’টি সওয়াব লেখা হবে। একশ’টি গোনাহ মুছে দেয়া হবে। সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকবে। এই দুআটি তার চেয়ে বেশি পড়া ছাড়া অন্য কোনো আমল দিয়ে ঐদিন তার আগে কেউ যেতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ একশ’ বার পাঠ করবে, সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও তার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে’। (বুখারী ৩২৯৩, মুসলিম ২৬৯১)

لاَ إِلهَ إِلاَّ اللّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

২. আবু আইয়ূব রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদ, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর’- যে ব্যক্তি এই দু’আটি দশ বার পাঠ করবে, সে ইসমাঈল আ. এর বংশ থেকে চারটি ক্রীতদাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে’। (বুখারী ৬৪০৪, মুসলিম ২৬৯৩)

brightness_1 রাসূলের সুন্নাহতে যিকিরের অসংখ্য পদ্ধতি এসেছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে: (২)

৩. সা’দ বিন ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি প্রত্যেক দিন এক হাজার নেকী কামাতে অক্ষম’? তখন একজন জিজ্ঞাসা করলো: কীভাবে এক হাজার নেকী কামাবে হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, ‘এক শত বার আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে, তাহলে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে। অথবা এক হাজার গোনাহ মুছে দেয়া হবে’। (মুসলিম ২৬৯৮)

৪. আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন একশত বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ পাঠ করবে, সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও তার গোনাহগুলো মুছে দেয়া হবে’। (বুখারী ৬৪০৫, মুসলিম ২৬৯২) সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায়  এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সকাল বেলা ও সন্ধ্যা বেলা একশত বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ যিকির করবে, এটা একশত বার কিংবা আরও বেশি যিকিরকারী ব্যতীত আর কেউ কিয়ামতের দিন তার চেয়ে উত্তম আমল নিয়ে আসবে না’। (মুসলিম ২৬৯২)

বিভিন্ন ধরনের  দুআ ও যিকির এবং তার ফযীলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস রয়েছে। এতক্ষণ আমরা কেবল প্রসিদ্ধ ও শ্রেষ্ঠ কিছু দুআ নিয়ে আলোচনা করলাম। এগুলো ছাড়াও অসংখ্য দুআ ও যিকির রয়েছে। উদাহরণত আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, ‘আমি কি তোমাকে জান্নাতের একটি ভাণ্ডারের পথ দেখিয়ে দিবো না’? আমি বললাম, জ্বী ‘আল্লাহর রাসূল অবশ্যই দিবেন’। তিনি ললেন, ‘বলো- লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। (বুখারী ৪২০২, মুসলিম ২৭০৪)

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার’ বলা আমার কাছে পৃথিবীর সবকিছুর থেকে প্রিয়’।  (মুসলিম ২৬৯৫)

 

brightness_1 রাসূলের সুন্নাহতে যিকিরের অসংখ্য পদ্ধতি এসেছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে: (৩)

ইস্তেগফারও এক ধরনের যিকির। আগার মুযানী রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আমার অন্তর অস্থির হয়ে ওঠে। আমি প্রত্যেক দিন একশত বার আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করি’। (মুসলিম ২৭০২)

এটা ইস্তেগফার করার আমলী দলীল। প্রায়োগিকভাবে দেখানোর পাশাপাশি নবীজী উম্মতকে এটা পালনের  মৌখিক নির্দেশনাও দিয়েছেন। সহীহ মুসলিমে আগার মুযানী রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো। আমি প্রত্যেক দিন আল্লাহর কাছে একশত বার তওবা করি’। (মুসলিম ২৭০২)

সহীহ বুখারীতে আবু হুরাইরা রা. এর হাদীস এসেছে। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যেকদিন সত্তুর বার ইস্তেগফার ও তওবা করি’। (বুখারী ৬৩০৭) সুতরাং আমাদেরও উচিত ইস্তেগফার থেকে গাফিল না হওয়া।

যিকিরের অধ্যায়ের পাশাপাশি বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের শেষ পর্যায়ে এসে আমরা একটি মহান যিকিরের দিকে পাঠকের দৃষ্টি  আকর্ষণ করবো। সেটি হচ্ছে বুখারী ও মুসলিমে আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীস। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, ‘দু’টি বাক্য এমন রয়েছে যা মুখে বলতে হালকা। অথচ কিয়ামতের দিন দাঁড়িপাল্লায় ভারী। আর আল্লাহর কাছেও অত্যন্ত প্রিয়। বাক্যদু’টি হলো: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম’। (বুখারী ৬৪০৬, মুসলিম ২৬৯৪)

সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার; যার দয়ায় সুন্দর কর্মসমূহ সম্পাদিত হয়